‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে যামিনী চরিত্রটি সম্পর্কে আলোচনা করো

যামিনী চরিত্র : বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের অন্যতম প্রাণশক্তি হল যামিনী। সমগ্র গল্পে তার উপস্থিতি পাঠকদের কাছে তাকে অসামান্যা করে তুলেছে।
অনাড়ম্বর ও সহজঃ যামিনী নিতান্তই সহজ-সরল আড়ম্বরহীন এক গ্রাম্য কন্যা। তার মধ্যে যেমন প্রগল্ভতা নেই, তেমনি অযথা আড়ষ্টতাও তার চরিত্রে অনুপস্থিত। তাই পুকুরঘাটে একেবারে অপরিচিত পুরুষকে দেখেও সে সংকুচিত হয়ে যায়নি, বরং জল ভরে চলে যাওয়ার আগে সে নায়ককে বলে, “বসে আছেন কেন? টান দিন।”
সেবাপরায়ণা: অরণ্য পরিবেষ্টিত, অন্ধকারময়, জনমানবহীন গ্রামের ভগ্ন অট্টালিকায় মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের সমস্ত অন্যায় সহ্য করে যামিনী মাকে সেবা করে চলেছে। আকস্মিকভাবে অতিথি উপস্থিত হলে তাদেরকেও যথাসম্ভব আতিথেয়তা দিয়েছে সে।
প্রতারিত কিন্তু কর্তব্যে অবিচল : যামিনীর মায়ের জ্ঞাতি স্থানীয় বোনপো নিরঞ্জন তাকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তবুও সে তার মায়ের কাছে এই প্রতারণার কথা জানায়নি। প্রতিনিয়ত নিজে দগ্ধ হলেও মৃত্যুপথযাত্রী মাকে সে কোনো আঘাত দিতে চায়নি।
প্রেমের ফল্লুস্রোতঃ দারিদ্র্য ও বঞ্চনার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করেও সদ্য যৌবনপ্রাপ্তা যামিনীর অন্তরে প্রবাহিত প্রেমের ফল্গুধারা। তাই, গল্প নায়ক বৃদ্ধাকে যখন যামিনীকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দেয় বা ফিরে যাওয়ার সময় তার মাছ ধরার ছিপখানি যামিনীর কাছে গচ্ছিত রাখে, তখন যামিনীর হাসি ও চোখের দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি প্রেমের শুভ্র জ্যোতিও প্রকাশ পায়।
এভাবেই গল্পে যামিনী তার উপস্থিতি দিয়ে সমগ্র কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।