ডাকিনীবিদ্যা থেকে সামাজিক বন্ধনমুক্তির ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানের ভূমিকা কী ছিল

ডাকিনীবিদ্যা থেকে সামাজিক বন্ধনমুক্তির ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানের ভূমিকা কী ছিল

অথবা, আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসার ডাকিনীবিদ্যার গুরুত্ব হ্রাসে কী ধরনের ভূমিকা পালন করেছিল

ডাকিনীবিদ্যা থেকে সামাজিক বন্ধনমুক্তির ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানের ভূমিকা কী ছিল
ডাকিনীবিদ্যা থেকে সামাজিক বন্ধনমুক্তির ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানের ভূমিকা কী ছিল

সুপ্রাচীন কাল থেকে জাদুবিদ্যা বা ডাইনিবিদ্যা বিশ্ব তথা ইউরোপের সমাজজীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। অতীতে ডাকিনীবিদ্যা নিয়ে সমাজে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। যার ফলে সমাজে অনেক নিরীহ মানুষ, বিশেষত নারীরা নির্যাতনের শিকার হত। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসার ঘটলে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

ডাকিনীবিদ্যা থেকে সামাজিক বন্ধনমুক্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ভূমিকা

ডাকিনীবিদ্যা থেকে সামাজিক বন্ধনমুক্তির ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

(1) যুক্তিবাদের প্রসার: মধ্যযুগের ডাইনিপ্রথার তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, মন্ত্রতন্ত্র ছিল রেনেসাঁ-প্রসূত ধারণার বিরোধী। নবজাগরণ-উদ্ভূত যুক্তিবাদ মানুষকে সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করতে শিখিয়েছিল। এই যুক্তিবাদের ফলে মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। যুক্তি দিয়ে ডাইনিতত্ত্বের উৎস সন্ধানে আগ্রহী হয়েছিল তারা। ফলে সমাজে নতুন চিন্তার উন্মেষ ঘটে।

(2)  কুসংস্কার দূরীকরণ: বিজ্ঞান ও শিক্ষার প্রসার ঘটলে মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদী ও প্রমাণভিত্তিক চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে। যার ফলে ডাইনিবিদ্যা সংক্রান্ত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারগুলি ক্রমশ অপসারিত হয়।

(3) বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যার প্রসার: বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যার যত অগ্রগতি হয়েছে, তত মানুষের অসুখবিসুখে Witch Doctor বা ওঝা-র উপস্থিতি কমেছে। চিকিৎসাবিদ্যার বিশ্বব্যাপী গবেষণা, নতুন নতুন ওষুধের আবিষ্কার, হাসপাতাল তৈরির পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাইনি চিকিৎসকের উপর নির্ভরতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। মানুষও হাতুড়ে ডাইনি ডাক্তারদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।

(4) বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান: আধুনিক বিজ্ঞান ডাইনিবিদ্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। মধ্যযুগে অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি ইত্যাদিকে ডাকিনীবিদ্যার ফলাফল বলে মনে করা হলেও বর্তমানে বিজ্ঞান তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে। ফলে মানুষের মন থেকেও ডাকিনীবিদ্যা সংক্রান্ত বহু অন্ধবিশ্বাস দূর হয়েছে।

(5) মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা: আধুনিক বিজ্ঞান ও শিক্ষার প্রসার সমাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। ফলে পূর্বে ডাইনিবিদ্যার অভিযোগে মানুষের উপর, বিশেষত নারীদের উপর যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হত, কিংবা ডাইনি-নিধনের মতো জঘন্য অপরাধ করা হত, তার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

মূল্যায়ন

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসার অতীতের ডাইনিবিদ্যা সংক্রান্ত নানান কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে সমাজকে ডাইনিবিদ্যার বন্ধন থেকে মুক্ত করে। সহায়তা করে এক যুক্তিনির্ভর সমাজগঠনে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top