ডাইনি কর্তৃক জাদুবিদ্যার প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি লেখো

ডাইনি কর্তৃক জাদুবিদ্যার প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি লেখো

ডাইনি কর্তৃক জাদুবিদ্যার প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি লেখো
ডাইনি কর্তৃক জাদুবিদ্যার প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি লেখো

মানবসভ্যতার ইতিহাস ঠিক যতটা প্রাচীন, জাদুবিদ্যা বা ডাইনি বিদ্যাচর্চার ইতিহাসও ততটাই প্রাচীন বলে মনে করা হয়। বিশ্বের নানা প্রান্তে জাদুবিদ্যা বা ডাইনিবিদ্যা প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাদুকর বা ডাইনিরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করত।

ডাইনিবিদ্যা প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহ

(1) শিকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ও আরাধনা: আদিম কালে মানুষ যখন খাদ্য সংগ্রাহক ছিল, তখন শিকারই ছিল তার প্রাণধারণের অন্যতম মাধ্যম। ভালো শিকারলাভের আশায় এবং শিকার শেষে অক্ষতভাবে ফিরে আসার তাগিদে আদিম মানুষ শিকারযাত্রার আগে বিভিন্ন জাদু, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি পালন করত। এক জায়গায় সকলে সমবেত হয়ে নাচ-গানের অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন শক্তির উদ্দেশে আরাধনা করত তারা। উইকান ধর্মে Witchcraft-এর অর্থই ছিল নারীদের নৃত্য।

(2) স্পর্শবিহীন প্রভাব: ইউরোপ, আফ্রিকা-সহ বিভিন্ন দেশে এই ধারণা প্রচলিত ছিল যে, প্রত্যক্ষ যোগাযোগ (Direct Contact) ও স্পর্শ (Touch) ছাড়াও কোনও ব্যক্তি বা জন্তুকে প্রভাবিত করা যায়। এর বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

  • প্রতিমূর্তির মাধ্যাম: ডাইনিরা মোম, মাটি, কাঠ ও কাপড় দিয়ে নির্দিষ্ট কোনও জন্তু বা ব্যক্তির প্রতিমূর্তি তৈরি করে তাকে শলাকা বা অস্ত্র দিয়ে বিভিন্নভাবে আঘাত করত। তাদের বিশ্বাস ছিল যে- এইভাবে প্রতিমূর্তিকে যত যন্ত্রণা দেওয়া যাবে, ওই আসল ব্যক্তি বা জন্তু তত যন্ত্রণা ভোগ করবে এবং ধীরে ধীরে মারা যাবে।
  • অঙ্গার ছড়ানোর মাধ্যাম: ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল যে- শিকারযোগ্য পশুর চলার পথে গরম অঙ্গার অর্থাৎ, জ্বলন্ত কয়লা ছড়িয়ে দিলে দূর থেকেই ওই পশুকে বশীভূত করা যায়।

(3) গুণাবলির স্থানান্তর: ডাইনিদের প্রভাবে মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মায় যে, একজনের গুণ অন্যজনের মধ্যে স্থানান্তর করা যায়। বোহেমিয়ার অধিবাসীদের মতে, কোনও গাছের প্রথম ফল কোনও বহু সন্তানবতী নারীকে দিয়ে পাড়ানো হলে, ওই নারীর উর্বরাশক্তি গাছের মধ্যেও সঞ্চারিত হবে এবং গাছের ফলপ্রদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

(4) সম্মোহনবিদ্যা প্রয়োগ: ডাইনিরা কমবেশি প্রায় সকলেই সম্মোহনবিদ্যা বা হিপনোসিস (Hypnosis) জানত। বিভিন্ন চিকিৎসায় এবং গর্ভবতী নারীর প্রসবযন্ত্রণা উপশমে তারা এই সম্মোহনবিদ্যা প্রয়োগ করত। ফলে সাধারণ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ তাদের ভয়-ভক্তি করে চলত।*

(5) চিত্র অঙ্কন: আদিম গুহাবাসী মানুষ গুহাগাত্রে বিভিন্ন পশুর ছবি এঁকে রাখত। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, এটা তাদের এক ধরনের আদিম জাদুবিশ্বাস। তারা মনে করত- কোনও পশুকে দেয়ালচিত্রে আটকে রাখতে পারলে তাকে বশীভূত করা যায়। অনেকের মতে, পশুবধের চিত্র আঁকলে বাস্তবে সত্যিই ঐ পশুকে বধ করা সহজসাধ্য হবে। ডাইনিরা মানুষ ও জীবজন্তুর দেহাংশ, নির্দিষ্ট কিছু গাছপালার অংশবিশেষ, এমনকি মাটি, পাথর, বিভিন্ন ধাতু, ঝাড়ু ইত্যাদি ব্যবহার করে মন্ত্র, আচার-অনুষ্ঠান কিংবা ধ্যানের মাধ্যমে উপরোক্ত পদ্ধতিগুলির প্রয়োগ করে। তবে ডাইনিবিদ্যা কার্যকর করার জন্য এই পদ্ধতিগুলি স্থানভেদে ডাইনিদের সমাজ-সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top