টীকা লেখো: ‘৯৫ থিসিস’

ভূমিকা
ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলন যাঁর হাত ধরে প্রত্যক্ষভাবে শুরু হয়েছিল তিনি হলেন জার্মানির উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক মার্টিন লুথার। তিনি প্রচলিত ক্যাথোলিক খ্রিস্টান ধর্ম ও পোপের দুর্নীতি ও অনৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং এক প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন।
(1) থিসিস রচনার পটভূমি: ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পোপের প্রতিনিধি হিসেবে সন্ন্যাসী টেটজেল জার্মানির বিভিন্ন স্থানে ইনডালজেন্স বা মার্জনাপত্র বিক্রির জন্য আসেন। চার্চের ভুল বোঝানোতে প্রভাবিত হয়ে দলে দলে মানুষ নিজেদের পাপক্ষয়ের জন্য প্রচুর অর্থের বিনিময়ে এই মার্জনাপত্র কিনতে থাকেন। লুথার চার্চের এই দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।
(2) থিসিস প্রকল্প: লুথার ঘোষণা করেন যে খ্রিস্টান ধর্মের তথাকথিত ধারক ও বাহকরা বাইবেল নির্দেশিত ধর্মীয় জীবন থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তিনি ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর উইটেনবার্গ চার্চের দরজায় লিখিতভাবে ৯৫টি প্রশ্ন বা অভিযোগ সম্বলিত তালিকা টাঙিয়ে দেন। এটি লুথারের ৯৫ থিসিস (95 Thesis) নামে খ্যাত।
(3) থিসিসের মূল বিষয়: মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিসের মূল বক্তব্য ছিল-(i) মুক্তি কেবল বিশ্বাসের ও অনুতাপের মাধ্যমে অর্জিত হয়, কোনো অর্থের বিনিময়ে নয়। (ii) পাপের ক্ষমা কেবল ঈশ্বর প্রদান করতে পারেন, কোনো পোপ বা ধর্মযাজক নয়। (iii) ধর্মযাজক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। (iv) খ্রিস্টান ধর্মের একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য কর্তৃপক্ষ হল বাইবেল। (v) পোপের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বাইবেল দ্বারা সীমাবদ্ধ ইত্যাদি।
(4) থিসিসের প্রভাব: লুথারের ৯৫ থিসিস বা তত্ত্বের কথা জার্মানি তথা ইউরোপের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এটি সমগ্র খ্রিস্টান জগতে এক তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে। ক্যাথোলিক চার্চের প্রতি মানুষের মনে জাগে নানা প্রশ্ন। পোপের প্রতিনিধি টেটজেল এই প্রশ্নাবলির প্রত্যুত্তরে লুথারকে ১০০টি প্রশ্ন করেন এবং তা ছাপিয়ে প্রচার করেন। কিন্তু জার্মান ছাত্ররা সেই প্রচারপত্র আগুনে পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেন।
মূল্যায়ন
‘৯৫ থিসিস’-এর মাধ্যমে লুথার যে ধর্মসংস্কারের সূত্রপাত করেন, তা ইউরোপে এক গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করে। শেষপর্যন্ত ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে অগসবার্গের সন্ধির দ্বারা ‘রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম’ বলে মেনে নেওয়া হয়। পোপের সর্বব্যাপী ক্ষমতা সীমিত হয়।