টাকা লেখো: চিস্তি সিলসিলা

ভূমিকা
ইসলামের মধ্য থেকেই সুফিবাদের উদ্ভব ঘটে। পরবর্তীকালে সুফিরা বহু ‘সিলসিলা’ বা সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিলেন। ঐতিহাসিক আবুল ফজল লিখেছেন যে, ভারতে সুফিদের চোদ্দোটি সম্প্রদায় প্রবেশ করেছিল। এগুলির মধ্যে ‘চিস্তি’ সিলসিলা বা সম্প্রদায় ভারতে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করেছিল।
(1) খাজা মইনুদ্দিন চিস্তি : ভারতের চিস্তি সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খাজা মইনুদ্দিন চিস্তি। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি পারস্যের শিস্তান থেকে ভারতে আসেন। তিনি আজমিরে তাঁর মতবাদ প্রচার করেন। তিনি হিন্দু সন্ন্যাসীদের মতোই সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। শোষিত ও নির্যাতিত বহু হিন্দু এবং মুসলমানরা তাঁর আদর্শে দীক্ষিত হন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি, শেখ হামিদউদ্দিন নাগোরি প্রমুখ।
(2) নিজামউদ্দিন আউলিয়া: চিস্তি সম্প্রদায়ের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় সুফিসন্ত বা সাধক হলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া। তিনি ছিলেন সুফি সাধক বাবা ফরিদের শিষ্য। দিল্লি সহ ভারতের নানা প্রান্তে তাঁর খানকা বা দরগা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সহ দিল্লির একাধিক সুলতানের তিনি গভীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দরিদ্র সাধারণ মানুষ থেকে অভিজাত অগণিত মানুষ এই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর বিখ্যাত শিষ্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রখ্যাত কবি আমির খসরু, ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরণী প্রমুখ। ভারতের চিস্তি সম্প্রদায়ের বিকাশে এবং বিভিন্ন ধর্ম-সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়।
(3) নাসিরউদ্দিন চিরাগ: চিস্তি সম্প্রদায়ের আর-এক বিখ্যাত সাধক হলেন নাসিরউদ্দিন চিরাগ। তিনি চিরাগ-ই-দিল্লি বা দিল্লির আলো নামেও সুপরিচিত। তিনি ছিলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়ার শিষ্য। নিজামউদ্দিনের পরে নাসিরউদ্দিনই দিল্লির প্রধান খানকা বা দরগার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সারাজীবন দীনদরিদ্র ও আর্তের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
মূল্যায়ন
সবশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগে যেসকল সুফি সম্প্রদায় প্রভাব বিস্তার করেছিল সেগুলির মধ্যে চিস্তি সম্প্রদায়ের জনপ্রিয়তা ও প্রভাব ছিল সর্বাধিক। চিস্তিরা সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনে বিশ্বাসী ছিলেন। এই সম্প্রদায়ের বিখ্যাত সন্ত শেখ সেলিম চিস্তির একান্ত অনুরাগী ছিলেন মোগল সম্রাট আকবর।