জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক কী

জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক কী

জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক কী
জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক কী

জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক

(1) জ্যোতিষশাস্ত্র: জ্যোতিষশাস্ত্র কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Astrology -যা গ্রিক শব্দ Astron বা নক্ষত্রমণ্ডলী এবং Logia বা অধ্যয়ন-এর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এই শাস্ত্রে মূলত বিভিন্ন গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান, মানুষের উপর তার প্রভাব বিশ্লেষণ এবং প্রতিকার বিধান দেওয়া হয়।

(2) জ্যোতির্বিজ্ঞান : জ্যোতির্বিজ্ঞান হল ধর্মনিরপেক্ষ ও নিরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান, যেখানে গ্রহনক্ষত্র ও অন্যান্য জ্যোতিষ্কের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে চর্চা করা হয়।

(3) জ্যোতিষচর্চার প্রাচীন ক্ষেত্র: জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান উভয়ক্ষেত্রেই গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান ও প্রকৃতি তথা মানবসমাজের উপর তাদের প্রভাব প্রধান আলোচ্য বিষয়। প্রাচীন ব্যাবিলন, মিশর, চিন, ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর উপরে ব্যাপক অনুসন্ধান বা গবেষণা চালানো হয়। জ্যোতিষচর্চার মূল প্রেরণা ছিল মানুষের মঙ্গল-অমঙ্গল এবং গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান ও গতি কীভাবে জীবনের উপর প্রভাব ফেলে তা নির্ধারণ করা। জ্যোতিষ-পুরোহিত গ্রহনক্ষত্রের অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার পথও নির্দেশ করে দিতে চেষ্টা করতেন। পঞ্চদশ শতকের আগে পর্যন্ত জ্যোতির্মণ্ডল সংক্রান্ত আলোচনা বা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ম, জীবন ও পার্থিব জগতের ভালো-মন্দের চিন্তা ছিল এর চালিকা শক্তি।

(4) জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের পার্থক্যকরণ: আলেকজান্ডারের সময় গ্রিসে জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানকে পৃথক শাস্ত্র হিসেবেই দেখা হত। একাদশ শতকে ইরানীয় পণ্ডিত আবু রায়হান অল বিরুনি জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের পার্থক্যকরণের ধারণা তুলে ধরেন। কোনও কোনও বিজ্ঞানী জ্যোতিষশাস্ত্রকে ছদ্মবিজ্ঞান (Pseudo-Science) বলেন। তবে মূলত নবজাগরণের পরবর্তীকালেই ধর্মনিরপেক্ষ, নিরীক্ষামূলক ও গাণিতিক জ্যোতিষ্কচর্চা শুরু হয়। এই পর্বে জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। বিশিষ্ট পণ্ডিত কিথ টমাস (Keith Thomas) বলেছেন যে, মানবদেহের উপর গ্রহের নিয়মিত প্রভাবের তত্ত্ব বিজ্ঞান স্বীকার করে না।

(5) জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সম্পর্ক: তবে জ্যোতিষচর্চার সঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সম্পর্ক সম্পূর্ণ অস্বীকার করা যায় না। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনেকেই জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টাইকো ব্রাহে, জোহানেস কেপলারের মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ সম্রাট দ্বিতীয় বুডলফের (Rudolf II) রাজসভায় জ্যোতিষী হিসেবেই নিযুক্ত হয়েছিলেন। পিথাগোরাস, নিউটন, গ্যালিলিও প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি জ্যোতিষশাস্ত্রে আগ্রহী ছিলেন। আবার অনেক জ্যোতিষীই নিজেদের গণনা নির্ভুল করে তোলার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের পদ্ধতি ব্যবহার করতেন।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top