জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশে ব্যাবিলনের অবদান কীরূপ ছিল

জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশে ব্যাবিলনের অবদান কীরূপ ছিল

জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশে ব্যাবিলনের অবদান কীরূপ ছিল
জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশে ব্যাবিলনের অবদান কীরূপ ছিল

জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশে ব্যাবিলনের অবদান

জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদগণ। ব্যাবিলনীয়রা তাদের জ্যোতির্বিদদের নাম দিয়েছিলেন Star-gazer বা নক্ষত্রদর্শক।

(1) জ্যোতির্বিদ্যার ধারণার উৎস: ব্যাবিলনীয়রা জ্যোতির্বিদ্যার ধারণা পায় মূলত কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে। চাষের উন্নতিতে কালের হিসাব রাখা ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কখন বছর ঘুরতে থাকে সেই বিষয়টি নিরূপণ করতে উদ্যত হন ব্যাবিলনীয়রা। এইভাবেই প্রাথমিক জ্যোতির্বিদ্যার আবির্ভাব ঘটে।

(2) জ্যোতির্বিদদের কার্যকলাপ: ব্যাবিলনে রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জ্যোতিষচর্চা চলত। রাজার নির্দেশে নক্ষত্রদর্শকেরা নিযুক্ত হতেন। তারা ছিল পুরোহিত শ্রেণির মানুষ এবং সরকারি প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপরেও তাঁদের নিয়ন্ত্রণ ছিল। এঁদের কাজ ছিল নিয়মিতভাবে গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান ও গতি পর্যবেক্ষণ করে মাস, বছর ও ঋতু পরিবর্তন সম্পর্কে রাজাকে অবহিত করা। গ্রহনক্ষত্রের গতিবিধি জানার জন্য তাঁরা গড়ে তুলেছিলেন জিগুরাত নামক কেন্দ্র। এখান থেকেই গ্রহনক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতেন তারা।

(3) দিন, মাস ও বছরের ধারণালাভ: প্রথমে ব্যাবিলনীয়রা সময় নিরূপণের জন্য দিন-রাত্রির পরিবর্তনকে এক নির্ভরযোগ্য মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করতেন। ক্রমশ এর থেকেও দীর্ঘতর মাপকাঠির প্রয়োজন হলে, মানুষ চন্দ্রকলার নিয়মিত হ্রাসবৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। এতে ঋতু পরিবর্তনের হিসাব রাখা অনেক বেশি সহজসাধ্য হয়। এখান থেকেই পরবর্তীকালে দিন, মাস ও বছরের ধারণার উদ্ভব হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দেরও পূর্বে ব্যাবিলনীয়রা পঞ্জিকা ব্যবহার করতেন। তারাই প্রথম এক বছরকে মাস ও সপ্তাহে এবং দিনকে ঘণ্টায় বিভক্ত করেছিলেন। এ ছাড়াও বছরের বিভিন্ন ঋতুগুলির ভাগ করে তাদের প্রতীকী নাম দেন ব্যাবিলনীয়রাই, যেমন- বসন্ত বৃষ, গ্রীষ্ম মেষশাবক, শরৎ বৃশ্চিক বা শীত-এর প্রতীকী নাম কচ্ছপ।

(4) রাশিচক্র: এখানকার জ্যোতির্বিদরা প্রথম রাশিচক্রের ধারণা দেন এবং সূর্যের বার্ষিক রাশিচক্র পরিক্রমার ভিত্তিতে একটি বছরকে বারো ভাগে ভাগ করেন। প্রতিটি ভাগের সঙ্গে তারামণ্ডলের সাদৃশ্য কল্পনা করে ভাগগুলির বৃষ, কর্কট, বৃশ্চিক ইত্যাদি নামকরণ করা হয়।

(5) মহাজাগতিক তথ্য: ব্যাবিলনীয়রা আকাশের বিভিন্ন গ্রহকে (যেমন- বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, শনি, মঙ্গল) শনাক্ত করেন। তারা চাঁদ ও গ্রহের গতিবিধি গণনা করে ঠিক কোন্ দিন চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হবে, তাও বলে দিতে পারতেন। ব্যাবিলনীয় জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, ক্যাসিওপিয়া (Cassiopia) নক্ষত্রমণ্ডলীকে বলা হত নারীর সঙ্গে শিশু। মনে করা হত যে, এই উজ্জ্বল নক্ষত্রটিই তিনজন পণ্ডিত ব্যক্তিকে জিশুর জন্মস্থানে যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন।

মূল্যায়ন

এ ছাড়া এই সময় ব্যাবিলনে বন্যা, যুদ্ধ বা সম্রাটের ভাগ্য ইত্যাদি সম্পর্কে জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চার মাধ্যমে পূর্বাভাস দেওয়ার প্রথা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সবমিলিয়ে সুদূর অতীতে জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশে ব্যাবিলনের অবদান ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যাবিলনীয় পর্যবেক্ষনের উপর নির্ভর করে পরবর্তীকালে হিপার্কাস, টলেমি প্রমুখ গ্রিক জ্যোতির্বিদগণ ভূকেন্দ্রীয় পরিকল্পনা রচনায় উল্লেখযোগ্যভাবে সাফল্যলাভ করেন।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top