জ্যোতির্বিজ্ঞান কী? জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রভাব বা গুরুত্ব আলোচনা করো

জ্যোতির্বিজ্ঞান কী? জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রভাব বা গুরুত্ব আলোচনা করো

জ্যোতির্বিজ্ঞান কী? জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রভাব বা গুরুত্ব আলোচনা করো
জ্যোতির্বিজ্ঞান কী? জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রভাব বা গুরুত্ব আলোচনা করো

জ্যোতির্বিজ্ঞান

জ্যোতির্বিজ্ঞান-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Astronomy, যা এসেছে গ্রিক শব্দ Astro (নক্ষত্র) এবং Nomos (আইন বা সংস্কৃতি) থেকে। Astronomy কথাটির অর্থ হল- নক্ষত্রসমূহের বিন্যাস। বস্তুতপক্ষে জ্যোতির্বিজ্ঞান বা জ্যোতির্বিদ্যা হল ধর্মনিরপেক্ষ ও নিরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান, যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে বিশ্বব্রয়াণ্ডে বিরাজমান নানান গ্রহনক্ষত্র ও জ্যোতিষ্কের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে চর্চা করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রাচীন কালে জ্যোতির্বিজ্ঞান হিসেবে কোনও পৃথক বিষয়ের অস্তিত্ব ছিল না। তবে মূলত নবজাগরণের পরবর্তী সময়েই ধর্মনিরপেক্ষ, নিরীক্ষামূলক ও গাণিতিক জ্যোতিষচর্চার সূচনা হয়। এই সময় থেকেই জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান দুটি পৃথক বিভাগ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে।

জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রভাব বা গুরুত্ব

জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রভাবগুলি হল-

(1) ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা: জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব হল ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা। বস্তুতপক্ষে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাদের চর্চায় যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ করে নিত্যনতুন ধারণার উদ্ভাবন ঘটায়। অনেকসময় এই সকল ধারণা, প্রচলিত ও ধর্মীয় ধারণার বিরোধী হত। যেমন ইউরোপে ভূকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাই চার্চ দীর্ঘদিন ধরে সত্য বলে মনে করত। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানের হাত ধরে পরবর্তীকালে এই ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়।

(2) সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা প্রতিষ্ঠা: ভূকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণার পরিবর্তে সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ এমনটাই মনে করত যে পৃথিবী স্থির ও সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে ব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে পৃথিবীর অবস্থান নয়, আসলে সূর্যকে কেন্দ্র করেই গ্রহমণ্ডলী আবর্তিত হচ্ছে।

(3)  মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান: মহাবিশ্বের উৎপত্তি, গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। সেইসঙ্গে গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান, প্রকৃতি সম্পর্কেও জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে নানান তথ্য জানা যায়। মহাকাশে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদির ভৌত এবং রাসায়নিক গুণাবলি, তাদের উৎপত্তি, বিবর্তন প্রভৃতির আলোচনার জন্য জ্যোতির্বিদ্যার শাখা হিসেবে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর উৎপত্তি হয়েছে।

(4) ক্যালেন্ডার তৈরি: জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতির একটি বিশেষ পর্বে ক্যালেন্ডার তৈরির গুরুত্ব লক্ষণীয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ক্রমবর্ধমান জ্ঞানলাভ ষোড়শ শতকে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সংস্কার ঘটাতে সাহায্য করেছিল। এই সংস্কারের দরুন পরবর্তীকালে তৈরি হয় পরিমার্জিত নতুন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। সর্বোপরি বলা যায়, জ্যোতির্বিদ্যা বা জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানচিন্তার যে প্রসার ঘটেছিল তা শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এর মাধ্যমে সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকের ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বে জ্ঞানদীপ্তির প্রসার ঘটেছিল।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top