ছুটি গল্প অবলম্বনে ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্র
রবীন্দ্রসাহিত্যে চরিত্র সৃষ্টিতে এক অপার বৈচিত্র্য দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ নিজে যেমন যুগস্রষ্টা, ঠিক তেমনই চরিত্রসৃষ্টিতেও তিনি এক কালোত্তীর্ণ স্রষ্টা। বাঙালি পরিবারের অতিপরিচিত গৃহস্থ চরিত্রেও অনন্যতার পরিচয় পাওয়া যায় রবীন্দ্রসাহিত্যে। ‘ছুটি’ গল্পের পূর্ণতা দানের জন্যই বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্র সৃষ্টি ও গল্পের পটভূমিতে আগমন।
বিশ্বম্ভরবাবুর পরিচয়ঃ কলকাতা শহরে স্ত্রী ও তিন পুত্রসন্তানসহ বাস করেন। কর্মসূত্রে বেশকিছু দিন পশ্চিমে ছিলেন ফটিকের মায়ের অগ্রজ ভ্রাতা বিশ্বম্ভরবাবু।
কর্তব্যবিমুখ বিশ্বস্তরবাবু : কর্মসূত্রে পশ্চিমে থাকায় দীর্ঘদিন বোনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। বোনের দুই সন্তানের জন্ম নেওয়া, তাদের বেড়ে ওঠা, বোনের স্বামীর মৃত্যু-এসব ঘটনায় তাঁর কখনও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। বহুকাল পর দেশে ফিরে বোনের সঙ্গে দেখা করতে আসলেও তাঁর এহেন আচরণ কর্তব্যবিমুখতারই উদাহরণ।
দায়িত্বশীল বিশ্বস্তরবাবু : বহুদিন পর সম্পর্কের দায়বদ্ধতা থেকে যখন বোনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বিশ্বম্ভরবাবু, তখন বোনের সংসার দেখে চিন্তিত হয়েছেন তিনি। বোনের মুখ চেয়ে ভাগ্নেটাকে কলকাতার বাড়িতে নিয়ে যেতে এবং তার পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে স্বীকৃত হয়েছেন।
দায়িত্ববোধ ও পৌরুষের অভাব: ফটিককে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসলেও নিজের স্ত্রীকে কখনোই ফটিকের মাতৃসমা করতে পারেননি, বরং ফটিকের ওপর তাঁর স্ত্রীর অত্যাচার ও নানাবিধ তিরস্কার দেখেও বিশ্বম্ভরবাবুকে নীরব থাকতেই আমরা দেখি।
ফটিকের প্রতি আচরণ: নিজের স্ত্রীর করা দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ না করতে পারলেও বিশ্বম্ভরবাবু ফটিকের প্রতি স্নেহশীল ছিলেন। ফটিক বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হলে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন তিনি। রোগশয্যায় শায়িত ফটিক সাহসে ভর করে যখন মামাকে জিজ্ঞেস করে সে কবে বাড়ি যাবে, তখন মামা সস্নেহে তাকে বলেন- “স্কুলের ছুটি হোক।” ফটিকের অবস্থা যখন ক্রমশ খারাপ হয়, তখন তিনি বোনকে খবর পাঠান। ফটিকের অন্তিমশয্যায় কর্তব্যের খাতিরেই বহুকষ্টে নিজের শোকোচ্ছ্বাস নিবৃত্ত করেন বিশ্বম্ভরবাবু।
কর্তব্যে, অকর্তব্যে, দায়ে-দায়িত্বে, স্নেহরসে জারিত এক বাঙালি পারিবারিক চরিত্র হয়ে ‘ছুটি’ গল্পে প্রকাশিত হয়েছেন বিশ্বম্ভরবাবু।