ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু
ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

ফটিক ও তার বন্ধুদের খেলার আয়োজন: ‘ছুটি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় এক নতুন ভাবনার উদয় হয়- নদীতীরে মাস্তুলে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য পড়ে থাকা প্রকাণ্ড একটি শালকাঠকে গড়িয়ে নিয়ে যাবে। বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার ছোটো ভাই মাখন। সে গম্ভীর হয়ে সেই শালকাঠের গুঁড়ির উপর গিয়ে বসে। ফটিক ও তার বন্ধুরা যখন মাখনকে সরাতে পারল না, তখন আর একটু বেশি মজার জন্য মাখনকে সুষ্ঠু ওই কাঠটিকে গড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইল। মাখন তাতে কিছুটা গৌরবান্বিত হলেও গুঁড়ি একপাক ঘুরতে না ঘুরতেই সে মাটিতে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে দাদার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে, একেবারে অন্ধভাবে দাদাকে মারতে থাকে। খেলা ভেঙে যায়।

বিশ্বম্ভরবাবুর প্রবেশ : ফটিকের দল যখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত সেই সময় একটি নৌকা ঘাটে এসে দাঁড়ায়। তার থেকে অর্ধবয়সি জনৈক ভদ্রলোক নামেন এবং ঘাটে বসে থাকা ফটিককে জিজ্ঞাসা করেন, “চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।” ফটিক কোনোক্রমে তাকে দিক নির্দেশ করে। তবে ভদ্রলোকের তা সঠিক বোধগম্য হয় কিনা সন্দেহ। ইতোমধ্যে বাঘা বাগদি এসে ফটিককে বলপূর্বক বাড়িতে নিয়ে যায়। ফটিককে দেখামাত্র তার মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। অভিযোগ করেন ফটিক মাখনকে পুনরায় কেন মেরেছে। ফটিক পালটা জবাব দেয় যে সে মাখনকে মারেনি। মাখন নিজে তখন জানায় যে, ফটিক তাকে মেরেছে। সেই রাগে ফটিক মাখনের গালে চড় বসিয়ে দেয় এবং মাকে ঠেলে ফেলে। ফটিক ও মাখনের মা চিৎকার শুরু করেন এবং ঠিক সেই মুহূর্তে মামা বিশ্বম্ভরবাবু চক্রবর্তী বাড়ির হদিশ পেয়ে প্রবেশ করেন।

ফটিকের গ্রাম ছেড়ে শহরে মামার বাড়িতে যাত্রা: পশ্চিমে কাজের সূত্রে ব্যস্ত বিশ্বম্ভরবাবু বহুদিন বোনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেননি। বোনের দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়া, স্বামীর মৃত্যু কোনোক্ষেত্রেই তিনি পাশে এসে দাঁড়াতে পারেননি। তাই দীর্ঘদিন পরে তিনি দেশে ফিরেই বোনের কুশল সংবাদ নিতে আসেন। বাড়ি ফিরে যাওয়ার দু-একদিন আগে বোনকে ফটিক ও মাখন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, ফটিকের উচ্ছৃঙ্খলতা, অমনোযোগ এবং বিপরীতে মাখনের সুশীলতা ও বিদ্যানুরাগের কথা জানান। সেসব শুনে বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে কলকাতায় নিজ বাসগৃহে নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করানোর প্রস্তাব দেন। ফটিকও একবাক্যে রাজি হয়। অবশেষে মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে খুশি মনেই ফটিক যাত্রা করে।

মামার বাড়ির অনাদর ও অবহেলা: বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে নিয়ে কলকাতায় পৌঁছোলে অনাবশ্যক পরিবার বৃদ্ধিতে মামি অসন্তুষ্ট হন। কারণ, তাঁর নিজেরও তিনটি ছেলে রয়েছে। গ্রাম্য বছর তেরোর এই বালকটিকে মামির নিতান্ত গলগ্রহই মনে হয়। তাকে ভালোবাসতে মন চায় না। ফটিক তা সহজেই বুঝতে পারে। মামির সামান্য স্নেহের আশায় সে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। তবে সে মামির না বলা কাজ করে দিয়েও প্রশংসা পায়নি, বরং পেয়েছে অনাদর, অবহেলা, তিরস্কার।

গ্রামে ফেরার ব্যাকুলতা ও জীবন থেকে ছুটি: মামার বাড়িতে অনার্দ্র, অবহেলা, ক্রমাগত তিরস্কার ও গঞ্জনায় ফটিক একেবারে বদলে যায়। শহরের চারদেয়ালের বন্দিজীবন আর প্রতিনিয়ত নিজের হীনতা ও দৈন্যতা তাকে পরিণত করে এক অসহায় ভীরু জীবে। মামার কাছে বাড়ি যাওয়ার কথা বলাতে সে জানতে পারে ছুটি হলে তবেই বাড়ি যাবে। তারপর বহু প্রত্যাশিত ছুটির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে ফটিক। তবে এই প্রতীক্ষা শেষ হচ্ছে না দেখে সে একদিন জ্বর গায়ে মুশলধারে শ্রাবণের বৃষ্টিতে বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

অবশেষে অর্ধচেতন অবস্থায় ভিজে কর্দমাক্ত শরীরে বিশ্বম্ভরবাবু অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ফিরে পান ফটিককে। প্রায় কোলে করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসেন তাকে। ক্রমে জ্বর অত্যন্ত বাড়তে থাকে। সারারাত্রি প্রলাপ বকতে থাকে ফটিক। বিশ্বম্ভরবাবু চিকিৎসককে খবর দেন। ফটিক জ্বরের ঘোরে বলতে থাকে “মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি”। পরবর্তী দু-দিনে অবস্থার আরও অবনতি হয়। বিশ্বম্ভরবাবু বোনকে খবর দেন, চিকিৎসকও জানান ফটিকের অবস্থা বড়োই খারাপ। তারপর ফটিকের মা এসে পৌঁছোলেন দাদার বাড়িতে। তবে ফটিক ততক্ষণে ছুটির সাড়া পেয়েছে-জীবন থেকে ছুটির সাড়া। অর্থাৎ, মৃত্যুদূত এসে দাঁড়িয়েছে ফটিকের সামনে। এখানেই গল্পের পরিসমাপ্তি।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top