চিনে কনফুসীয়বাদের প্রভাব আলোচনা করো
অথবা, চিনের সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে কনফুসীয়বাদের প্রভাব লেখো

ভূমিকা
কনফুসিয়াস ছিলেন প্রাচীন চিনের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় দার্শনিক ও চিন্তাবিদ। তাঁর শিক্ষা ও দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে ‘কনফুসীয়বাদ’। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় বিংশ শতকের সূচনা পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল ব্যাপী চিনের সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক জীবনে কনফুসীয়বাদের প্রভাব ছিল সর্বাধিক।
(1) সমাজজীবনে প্রভাব: ব্যক্তি, পরিবার তথা সমাজজীবনে কনফুসীয়বাদের প্রভাব ছিল অপরিসীম। যথা-
- ব্যক্তিজীবনে প্রভাব: কনফুসিয়াস ছিলেন মূলত একজন নীতিবাদী দার্শনিক। ব্যক্তিজীবনে সুশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি নানা নৈতিক গুণাবলি বা আদর্শের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি ব্যক্তি বা মানুষকে ন্যায়পরায়ণ, সৎ, সংযমী, সহানুভূতিশীল এবং মানবিক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
- পারিবারিক জীবনে প্রভাব: কনফুসিয়াস মনে করতেন, সুশৃঙ্খল পরিবারই হল আদর্শ সমাজব্যবস্থার মূলভিত্তি। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিশ্বাস, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। তাই পরিবার তথা সমাজের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কনফুসীয়বাদের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।
(2) রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব: কনফুসীয়বাদ প্রাচীন চিনের রাষ্ট্র পরিচালনার রীতিনীতি ও আদর্শকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি মনে করতেন, সম্রাট স্বর্গীয় আদেশ অনুসারে দেশ শাসন করেন। তাই তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দায়বদ্ধ। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলে জনগণ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে। এইভাবে তিনি শাসকের স্বৈরাচারিতার বিরোধিতা করে চিনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আদর্শ গড়ে তোলেন।
(3) শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রভাব: কনফুসীয়বাদ কোনো ধর্মীয় আদর্শ বা মতবাদ নয়। এটি হল একটি দার্শনিক তত্ত্ব। এটি মানুষের পথ চলার আদর্শ। কনফুসিয়াস জ্ঞান ও শিক্ষার ওপরই নৈতিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি মনে করতেন, শিক্ষাই মানুষের স্বভাবকে পূর্ণতা দান করে।
মূল্যায়ন
পরিশেষে বলা যায় যে, কনফুসিয়াস ছিলেন একজন বাস্তববাদী দার্শনিক। প্রকৃত অর্থে কুনফুসীয়বাদ কোনো ধর্ম বা ধর্মীয় মতাদর্শ নয়, এটি একটি দর্শন। তিনি ছিলেন প্রকৃতই একজন নীতিধর্ম প্রচারক। প্রাচীন চিনের সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কনফুসিয়াসের নীতি ও আদর্শসমূহের প্রভাব ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য।