কোপারনিকাসের বিজ্ঞানচর্চা সম্পর্কে টীকা লেখো

ভূমিকা
রেনেসাঁ যুগে কালজয়ী জ্যোতির্বিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক পোল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে ধারণার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনেন।
(1) পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্ব: প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপে টলেমীয় ও অ্যারিস্টট্লীয় মহাবিশ্বের ধারণা প্রচলিত ছিল। এতে বলা হয়েছিল যে বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছে পৃথিবী এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহনক্ষত্র আবর্তন করছে।
(2) সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্ব: ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে কোপারনিকাস তাঁর ‘জ্যোতিষ্কসমূহের কক্ষপথের আবর্তন’ (‘De Revolutionibus Orbieum codestium’) নামক গ্রন্থপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্র পৃথিবী নয়। গ্রহনক্ষত্রের কেন্দ্রে সূর্যের অবস্থান। পৃথিবীসহ অন্যান্য সব গ্রহ-উপগ্রহগুলি নির্দিষ্ট বৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে চলেছে। তাঁর এই তত্ত্ব সমস্ত প্রাচীন ধারণা, এমনকি খ্রিস্টান চার্চের প্রচারিত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণাকে ভেঙে দেয়। এই ধারণা জ্যোতির্বিদ্যা চর্চায় এক নতুন দিগন্তকে প্রসারিত করে। তাই এই ঘটনা কোপারনিকাসের বিপ্লব নামে খ্যাত।
মূল্যায়ন
কোপারনিকাসের জীবিতকালে খুব কম জ্যোতির্বিজ্ঞানই তাঁর তত্ত্বকে বিশ্বাস ও সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর জিওরদানো ব্রুনো, কেপলার, নিউটন প্রমুখ বিজ্ঞানী কোপারনিকাসের প্রদর্শিত পথেই জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার এই বিপ্লবকে সম্পূর্ণ করেছেন।