কলকাতা শহরে ফটিকের স্কুলজীবন কেমন ছিল তা বর্ণনা করো

কলকাতা শহরে ফটিকের স্কুলজীবন
বিশ্বম্ভরবাবু তাঁর ভাগ্নে ফটিকের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসেন এবং স্কুলে ভরতি করে দেন। স্কুলে ফটিকের মতো নির্বোধ ও অমনোযোগী ছাত্র আর একটিও ছিল না। তাকে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করা হলে অবাক দৃষ্টিতে সে শুধু চেয়ে থাকত। ‘ভারক্লান্ত গর্দভের মতো নীরবে’ শিক্ষক মহাশয়ের প্রহার সহ্য করত ফটিক। যখন ছেলেদের খেলার ছুটি হত, তখন সেই খেলার ফটিক অংশগ্রহণ করত না। স্কুলের জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দূরের বাড়িগুলোর ছাদের দিকে সে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকত। দৈবাৎ ছাদে খেলার ছলে দু-একটি ছেলেমেয়েকে দেখলে, তার মন অধীর হয়ে উঠত। হয়তো মনে পড়ত ফেলে আসা বন্ধুদের কথা, ফেলে আসা খেলাধুলোর স্মৃতি।
একদিন ফটিক তার স্কুলের বই হারিয়ে ফেলেছিল। একে তো সহজে পড়া তৈরি হত না, তার ওপর বই হারিয়ে সে একেবারে নিরুপায় হয়ে পড়েছিল। সে নিয়ে শিক্ষক মহাশয় প্রতিদিন তাকে অত্যন্ত মারধোর এবং অপমান করতে শুরু করলেন। স্কুলে তার এমন অবস্থা হল যে, তার মামাতো ভাইরা তার সঙ্গে সকল প্রকার সম্বন্ধ স্বীকার করতেও লজ্জাবোধ করত। ফটিক অপমানিত হলে, অনান্য ছেলেদের থেকেও তার আপন মামাতো ভাইদের অনেক বেশি আনন্দ হত। এসব কারণে স্কুলের পরিবেশ তার কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে। ফলে একদিন ফটিক বাধ্য হয়ে মামির কাছে এসে তার বই হারানোর অপরাধ স্বীকার করে নেয় এবং মামির কাছে প্রবল তিরস্কৃত হয়। অভিমানে মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে একদিন স্কুল থেকে ফিরে ফটিক অসুস্থ হয়ে পড়ে যা ক্রমেই তাকে মামার বাড়িতে থেকে পালিয়ে যেতে, এমনকি জীবনের দুস্তর পথ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। এই ছিল ফটিকের কলকাতা শহরের স্কুলজীবন।