কন্যাশ্রী প্রকল্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

কন্যাশ্রী প্রকল্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

কন্যাশ্রী প্রকল্প - মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
কন্যাশ্রী প্রকল্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
  • কন্যাশ্রী প্রকল্প সম্পর্কিত ধারণা
  • নারীর উন্নয়নে প্রকল্প
  • প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ
  • কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য
  • প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা

নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার 

কেন নাহি দিবে অধিকার 

হে বিধাতা।

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রখ্যাত জাতীয়তাবাদী নেতা গোপালকৃষ্ণ গোখেল বলেছিলেন, “What Bengal thinks today, India Thinks tomorrow” আজকের বাংলার প্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যদি বলি “What Bengal Thinks today, world thinks tomorrow,” তাহলে বোধহয় অত্যুক্তি হয় না। কারণ বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্‌দ্গাতা, আজ তা সারা বিশ্বে অভিনন্দিত ও প্রশংসিত এবং অনুকরণীয়ও বটে।

এ বছর অর্থাৎ ২০২৩-এ আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক মস্তিষ্কপ্রসূত, স্বপ্নের কন্যাশ্রী প্রকল্প দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উদ্যোগে ১৪ আগস্ট দিনটি মহাসমারোহে পালিত হয় কন্যাশ্রী দিবস। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের ৬২টি দেশের ৫৫২টি জনহিতকর প্রকল্পের মধ্যে আমাদের রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্প ইউনেস্কোর কাছ থেকে বিশ্বসেরা সম্মান পুরস্কার লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের কাছে এটি গর্বের বিষয়। তাই আজ রাজ্য, দেশের গন্ডি পেরিয়ে কন্যাশ্রী হয়ে উঠেছে বিশ্বশ্রী।

কন্যাশ্রী প্রকল্প কী?: ‘কন্যাশ্রী’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল নারীর সৌন্দর্য। মেয়েরাও যে সমাজে সৌন্দর্যবতী, তাদেরও যে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার আছে, সমাজ-সংসারে তারা যে ‘আপদ’ নয়, ‘সম্পদ’-সেই সত্যটিকে তুলে ধরার লক্ষ্যেই ২০১৩ সালে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনা। এক কথায় সুন্দর সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকাও যে কোনো অংশে কম নয় সেই সত্যকে রূপায়িত করা বা নারীজাতির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যেই আর্থিক সাহায্য অঙ্গীকারে আবদ্ধ এই কন্যাশ্রী প্রকল্প।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা: পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কখনোই নারী- স্বাধীনতাকে স্বীকার করতে চায়নি- চায় না। অদৃষ্টের বন্ধনে আবদ্ধ নারীজাতি কুমারী বয়সে পিতার অধীন, যৌবনে স্বামীর অধীন এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীন। শিবনাথ শাস্ত্রী বলেছেন, বঙ্গের নারীর দশা কী বলিব। পিঞ্জরের পাখি তারা।’ আর তাদের শৃঙ্খলমুক্তির প্রয়াসেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের রূপায়ণ। আর্থিক দিক থেকে দুর্বল মেয়েদের লেখাপড়া শেখা, স্বনির্ভর হয়ে ওঠা, বাল্যবিবাহের উদ্বন্ধন থেকে নিজেদের রক্ষা করা-এ সবের জন্যই আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প।

সফলতা : সূচনা লগ্নেই কন্যাশ্রী প্রকল্প বিপুল সফলতা লাভে ধন্য। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সাধু উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বের নানা দেশ। বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প। নারীজাতির মুখে হাসি ফুটেছে, তারা বুঝতে পেরেছে যে, কোনো মেয়েকে আর টাকার অভাবে লেখাপড়া ছাড়তে হবে না, শিশুশ্রমিকের তকমা নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে না। কন্যাসন্তান যে সমাজে অবহেলিতা নয়, সাধারণ মানুষকে তা বুঝিয়ে দিতে পারা এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য।

প্রকল্প কাদের জন্য: কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসবে স্কুলকলেজে পাঠরতা সেই সব ছাত্রীরাই যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে এবং পরিবারের বার্ষিক আয় ১,২০,০০০ টাকার নীচে। বার্ষিক আয়ের উপযুক্ত প্রমাণপত্র, জাতকপত্র এবং অবিবাহিতা হওয়ার শংসাপত্র এই প্রকল্পের সুযোগ নিতে সাহায্য করবে। আর বিষয়গুলি পর্যবেক্ষণ করবেন BDO, SDO, District Social Welfare Officer, District Project Officer প্রমুখ পদাধিকারীরা। BPL তালিকাভুক্ত অথবা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের প্রায় সব ছাত্রীই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে।

উপসংহার: অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, সমাজে নারীর স্থান অবনত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের স্থান আপনি নামিয়া আসে। তাই সুস্থসবল সমাজ গঠনের স্বপ্নপূরণে ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, যা নারীকে দেবে আপন ভাগ্য জয় করার সুনিশ্চিত সহায়। সে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হবে-

জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী, 

সুষমা লক্ষ্মী, নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top