ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্রে প্রাচ্যের অবদান কী ছিল

ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্রে প্রাচ্যের অবদান কী ছিল

ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্রে প্রাচ্যের অবদান কী ছিল
ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্রে প্রাচ্যের অবদান কী ছিল

ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে প্রাচ্যের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইউরোপীয় বিজ্ঞানের মূল প্রেরণা গ্রিক বিজ্ঞান হলেও গ্রিকদের বিজ্ঞানচর্চার অনেক আগেই ভারত, চিন, মধ্যপ্রাচ্য-সহ প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্রে প্রাচ্যের অবদান

(1) আরবদেশে বিজ্ঞানচর্চা: ইসলামি সভ্যতার স্বর্ণযুগে আরবরা প্রাচীন জ্ঞানকে সংরক্ষণ, অনুবাদের মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্র প্রস্তুতিতে সাহায্য করেছিল। নবজাগরণের পূর্বে আরব পণ্ডিতদের বিভিন্ন রচনা অনুবাদের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছোলে ইউরোপ জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারার সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আরবদের দ্বারা অধিকৃত স্পেনে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, রসায়নশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ের চর্চা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আরবদেশের কয়েকজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব, যাঁরা বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন, তাঁরা হলেন- জাবির ইবন, টলেমি, ইবন সিনা, অল-রাজি, অল-বাত্তানি, নাসির অল-দিন অল-তুসি প্রমুখ।

(2) ভারতে বিজ্ঞানচর্চা: গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান-সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ বিশেষ অবদান রেখেছিল। বৈদিক যুগ থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত এখানে ধারাবাহিকভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা পরিলক্ষিত হয়। আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্তের কার্যাবলির মাধ্যমে পঞ্চম থেকে সপ্তম শতক নাগাদ ভারতে বিজ্ঞানচর্চায় অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটতে থাকে। ভারতীয় গণিতবিদরা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি ও শূন্য আবিষ্কার করেন বলে জানা যায়। তাছাড়া নাগার্জুন, বাগভট্ট, চক্রপাণি দত্ত প্রমুখ চিকিৎসাবিদ্যা ও রসায়নচর্চায় বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।

(3) চিনদেশে বিজ্ঞানচর্চা: চিনে চেন-লুয়ান, লো-চি প্রমুখ পণ্ডিতগণ গণিত ও জ্যোতিষশাস্ত্রের চর্চায় দক্ষতার পরিচয় রেখেছিলেন। তাছাড়া চিনের কারিগর ও বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় কাগজ তৈরির প্রযুক্তি ও মুদ্রণশিল্প, চুম্বক ও কম্পাসের উদ্ভাবন, বারুদের আবিষ্কার ইত্যাদি বিষয়গুলি পরবর্তীতে ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছিল।

মন্তব্য

প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তির উন্নয়ন দ্বারা ইউরোপের বিজ্ঞানচর্চা প্রভাবিত হয়েছিল। চিন, ভারতবর্ষ, আরবের বৈজ্ঞানিক ও কারিগররা তাঁদের গবেষণা ও নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে ইউরোপকে বিজ্ঞানচর্চার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। ফলে ইউরোপ আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ষোড়শ-সপ্তদশ শতক নাগাদ ইউরোপে ঘটে গিয়েছিল বিজ্ঞান বিপ্লব। প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমেই আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব সম্ভব হয়েছিল বলে গবেষকগণ মনে করে থাকেন।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top