ইউরোপের প্রতি ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিবরণ দাও

ভূমিকা
ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ব্যাপক ও দ্রুত বিস্তার এবং ফলাফল হিসেবে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের প্রসারে ধর্মপ্রাণ ক্যাথোলিকরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। ক্যাথোলিক মতবাদের অস্তিত্বের সংকট উপস্থিত হয়। এই পরিস্থিতিতে কিছু সৎ যাজক ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ক্যাথোলিক চার্চের দুর্নীতি ও অনাচার বন্ধ করে, যাজকদের সৎ ও পবিত্র ধর্মীয় জীবনযাপনের মাধ্যমে ক্যাথোলিক চার্চের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। এইভাবে খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে ক্যাথোলিক ধর্ম ও চার্চের যে শুদ্ধিকরণ আন্দোলন শুরু হয় তা Counter Reformation বা প্রতি ধর্মসংস্কার আন্দোলন নামে খ্যাত।
(1) পোপগণের উদ্যোগ: পোপ দশম লিও (১৫১৩-১৫২১ খ্রিস্টাব্দ), পোপ তৃতীয় পল (১৫৩৪-১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দ), পোপ পঞ্চম পায়াস (১৫৬৬-১৫৭২ খ্রিস্টাব্দ) প্রমুখ এ বিষয়ে অগ্রণী হন। বিশেষ করে পঞ্চম পায়াসের সময়ে চার্চের সংস্কার গতিপ্রাপ্ত হয়।
(2) ট্রেন্টের ধর্মসভা: পোপ তৃতীয় পলের উদ্যোগে ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইটালির ট্রেন্ট শহরে একটি ধর্মসভা আয়োজিত হয় যা কাউন্সিল অফ ট্রেন্ট (Council of Trent) নামে পরিচিত। এই সভা ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে এবং এখানে যাজকদের জন্য কিছু নিয়মনীতি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। তাঁদের পবিত্র জীবনযাপন ও জ্ঞানচর্চা বাধ্যতামূলক করা হয়। এ ছাড়া ধর্ম সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে জনগণের থেকে অর্থ আদায় বন্ধ করা হয়।
(3) ইনক্যুইজিশন: স্পেনের রানি ইসাবেলার উদ্যোগে স্পেনীয় ধর্মবিরোধীদের দমন করার জন্য ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে ইনক্যুইজিশন নামে একটি বিশেষ ধর্মীয় আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। ধর্মবিরোধীদের খুঁজে বের করে এই আদালতে বিচার দ্বারা শাস্তিদান করা হত। তবে এটি শেষপর্যন্ত যে-কোনো বিরোধী মতবাদে বিশ্বাসী মানুষদের হত্যা করার যন্ত্রে পরিণত হয়।
(4) সোসাইটি অফ জেসাস: স্পেনের ধর্মনেতা ইগনেসিয়াস লয়োলা সোসাইটি অফ জেসাস (Society of Jesus) বা জেসুইট সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল যিশুখ্রিস্টের সেবা ও ত্যাগের আদর্শ প্রচার করা। তিনি সমাজসেবা ও শিক্ষার প্রসারের ওপর জোর দেন। এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের সৎ, দরিদ্র, সেবাপরায়ণ জীবনযাপন ও ধর্মীয় নিষ্ঠা দেখে পোল্যান্ডে ক্যাথোলিক ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
মূল্যায়ন
প্রতি ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে ক্যাথোলিক ধর্মের অনাচার ও দুর্নীতি অনেক কমে যায়। যাজক শ্রেণি নৈতিক জীবনযাপন ও ধর্মচর্চায় মনোযোগী হন। সর্বোপরি রোমান ক্যাথোলিক চার্চের প্রতি মানুষের যে অশ্রদ্ধা, অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল ধীরে ধীরে তা দূর হতে থাকে এবং চার্চের মর্যাদা অনেকটাই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।