“আপনার দুই বন্ধু তখন দুই কারণে অচেতন।”-এখানে কার বন্ধুদের কথা বলা হয়েছে? তারা কেন অচেতন? যাঁর বন্ধু তিনি কী করছিলেন?

যার বন্ধু : বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক এক কল্প ভ্রমণকাহিনির নায়ক চরিত্রের বন্ধুদের কথা এখানে বলা হয়েছে।
বন্ধুদের অচেতনতার কারণ: নায়কটির এক বন্ধু ঘুমকাতুরে। তাই ভগ্ন অট্টালিকার ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরে ঢুকেই শতরঞ্জি বিছিয়ে তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তার আর-এক বন্ধু, যাঁর নাম মণি, তিনি পানরসিক। তিনি ঘরে ঢুকে পানপাত্রে নিজেকে নিমজ্জিত করে দেন। তাই অনতিবিলম্বেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।
কথকের ভূমিকা : গল্পের নায়ক তথা কথক চরিত্রের চোখে ঘুম নেই। একদিকে ভাঙা লণ্ঠনের চিমনি ক্রমে গাঢ় কালো হয়ে ওঠে, অপরদিকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশাদের ঘনিষ্ঠতা ও শোণিত সম্পর্ক বেড়ে চলে। উপায়ান্তর না দেখে নায়ক বাধ্য হন শয্যা ত্যাগ করতে। গুমোট গরম থেকে রক্ষা পেতে টর্চ হাতে ভগ্নপ্রায় সিঁড়ি বেয়ে, ক্রমান্বয়ে ধসে পড়া ইট-বালির বিপর্যয় অতিক্রম করে ছাদে ওঠার চেষ্টা করেন। আলিসা ভাঙা ছাদ ততক্ষণে কৃষ্ণপক্ষের ক্ষীণ আলোয় মোহময় হয়ে উঠেছে।
নায়কের আবিষ্ট মনে ঠাকুরমার ঝুলির সেই রাজকুমারী ভেসে ওঠে, যে এমনই প্রেতপুরীতে শয্যার দুই পাশে সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠি নিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন। অকস্মাৎ সংকীর্ণ রাস্তার অপর প্রান্তের দৃশ্যমান ভগ্নস্তূপের কোনো-একটি জানলায় আলোর রেখা আড়াল করে এক বাতায়নবর্তিনীর অস্পষ্ট ছায়া দেখে চমক লাগে তার মনে। অবশ্য মুহূর্তের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায় সে। বিমূঢ় ভাব কেটে গেলে নায়কের মনে হয় এ হয়তো তার মনের ভুল। এভাবেই গল্পের নায়ক চরিত্রের রাত অতিবাহিত হয়।