আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা করো
আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা করো

ইংরেজি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে- ‘Necessity is the mother of Invention.’ অর্থাৎ, আবিষ্কারের জন্ম প্রয়োজনের তাগিদেই। বস্তুতপক্ষে, মানুষের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনিমাত্র। অজানাকে জানার ইচ্ছা জন্ম দিয়েছে বিজ্ঞানের, আর বিজ্ঞান দিয়েছে মানুষকে গতি আর আত্মনির্ভরতা। অজ্ঞানতার অন্ধকার দূরীভূত হতে থাকে বিজ্ঞানের সাধনায়। এই আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ইতিহাস অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘ। প্রাচীন কালে বিজ্ঞানচর্চার প্রতি যে প্রাথমিক ধারণা মানুষের মধ্যে জন্মেছিল, তা নবজাগরণের যুগ পেরিয়ে বর্তমানকাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ইতিহাস

(1)  প্রাচীন যুগ: প্রাচীন যুগেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতে গুপ্ত যুগের প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী আর্যভট্ট নানান গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান ও আবর্তনের কথা বলেন। তাঁর আর্যভটীয় নামক গ্রন্থে পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাবিলনীয়, মিশরীয় ও গ্রিক সভ্যতায় চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত প্রভৃতি বিষয়ের সূচনা ঘটে। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো, পিথাগোরাস, অ্যারিস্টটল প্রমুখের কাজগুলি প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য প্রদান করেছিল।

(2) মধ্যযুগ: মধ্যযুগে বিজ্ঞানের গতি কিছুটা ধীর হয়ে যায়। তবে এসময় ইসলামিক সভ্যতার বিকাশের ফলে বিজ্ঞানচর্চার উন্নতি লক্ষ করা গিয়েছিল। মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞানীগণ, যথা- ইবন সিনা, ইবন রশিদ, নাসির অল-দিন অল-তুসি প্রমুখ বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

(3) রেনেসাঁ বা নবজাগরণের যুগ: নবজাগরণ পূর্ববর্তীকালে আরব পণ্ডিতদের রচনা অনুবাদের মাধ্যমে ইউরোপ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। ক্রমে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের প্রতি পণ্ডিতদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে নবজাগরণের প্রভাবে ইউরোপে জ্ঞান ও সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ ঘটে। বিজ্ঞানচর্চায় বিশেষ পরিবর্তন সূচিত হয়। আলোচ্য পর্বে কোপারনিকাস, গ্যালিলিও-র মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা দেন। এ ছাড়া উন্নতি ঘটে চিকিৎসাশাস্ত্রেরও। আবিষ্কৃত হয় বারুদ।

(4) বিজ্ঞান বিপ্লব: ষোড়শ-সপ্তদশ শতকের ইউরোপে মানবচেতনায় বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কিত নতুন ধ্যানধারণার আবির্ভাব ঘটে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মৌলিক আবিষ্কারসমূহ কৃষি, শিল্পোৎপাদন, সামরিক ব্যবস্থা ও মুদ্রণ ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় অগ্রগতির সূচনা করে, তা বিজ্ঞান বিপ্লব নামে পরিচিত। আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বৈজ্ঞানিক বিপ্লব দ্বারা যে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সূচনা হয়েছিল, তা আরও পরিপূর্ণতা লাভ করে উনবিংশ, বিংশ ও একবিংশ শতকে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব, ম্যাক্স প্ল্যাংকের কোয়ান্টাম তত্ত্ব, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের দ্বারা। বস্তুতপক্ষে প্রাচীন কালের ধ্রুপদি জ্ঞানের পুনরুদ্ধার, রেনেসাঁ বা নবজাগরণ এবং বিজ্ঞান বিপ্লব যে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবে সহায়ক হয়েছিল-তা বলাই যায়।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top