আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা
আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

সাহিত্যের যে-কোনো আঙ্গিকেই নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই নামকরণের মধ্যেই প্রচ্ছন্ন থাকে লেখকের অভিপ্রায়-যা পাঠককে বিষয় সম্পর্কে অবহিত করে তোলে। লেখক তাঁর কাব্য, নাটক, গল্পের একটা নাম – দেন বা সেগুলিকে একটি অভিধায় চিহ্নিত করেন, একেই বলে নামকরণ। নামকরণের প্রাক্কালে লেখকরা কতকগুলি বিষয়ের ওপর লক্ষ রাখেন, সেগুলি হল-ঘটনা, চরিত্র ও ব্যঞ্জনা। এখন আলোচ্য মূল বিষয় হল বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকটিতে নামকরণের কোন্ রীতিকে অনুসরণ করেছে এবং তা কতখানি বাস্তবোচিত ও সার্থক।

‘আগুন’ নাটকের কাহিনির দিকে যদি লক্ষ করি তবে সেখানে পাঁচটি দৃশ্য লক্ষ করা যায়। প্রথমটিতে সাধারণ সবজি বিক্রেতার পরিবার। দ্বিতীয় দৃশ্যে কৃষক পরিবার, তৃতীয় দৃশ্যে কারখানার শ্রমিক পরিবার এবং চতুর্থ দৃশ্যে কেরানি হরেকৃষ্ণবাবুর মধ্যবিত্ত পরিবার। বিভিন্ন শ্রেণির চারটি পরিবারের সমস্যা কিন্তু এক-চাল ও চালের আকাল। এই চাল অর্থাৎ খাদ্যবস্তু যা মানুষের ক্ষুধার আগুন অর্থাৎ পেটের জ্বালার নিবারণ করতে পারে। নাটকে উল্লিখিত চারটি পরিবারের প্রতিনিয়ত যে সংগ্রাম তা হল বেঁচে থাকার সংগ্রাম, ক্ষুধার আগুনকে নির্বাপিত করার জন্য একমুঠো চালের জন্য সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সংগ্রাম। যেখানে অনিশ্চয়তা প্রতি মুহূর্তে মনোবলকে খান খান করে ভেঙে দিতে উদ্যত। আর এই অভাব থেকেই দেখা যায় পারিবারিক বিবাদের ও মনোমালিন্যের ছাই চাপা আগুনের আভাস। চারটি খণ্ড দৃশ্যের মধ্য দিয়ে নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য পঞ্চাশের মন্বন্তরের কিছু আগেই খাদ্য মজুত করে কৃত্রিম খাদ্যাভাব তৈরি করে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় সেই রূপটি দর্শকের সামনে আনতে সমর্থ হয়েছেন। পঞ্চম বা পরিণতির দৃশ্যে আরও বহুর সাথে চালের লাইনে দাঁড়িয়ে বহুবিধ সমস্যা, অপমান, পুলিশের অযথা খবরদারি, দোকানদারের অপমানজনক মন্তব্য, লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে নিজেদের মধ্যে মৃদু গণ্ডগোল এবং পরিশেষে একে অন্যের হয়ে কথা বলায় কিছুটা প্রতিবাদী সুর একত্রিত হয়। পঞ্চম দৃশ্যে কলহরত জনতার সামনে যখন জনৈক যুবক আগুন আগুন বলে ওঠে, সবাই তখন উদ্‌গ্রীব হয়ে জিজ্ঞাসা করে ওঠে-“আগুন কোথায়?” যুবক সকলের কাছে হাতজড়ো করে বলে ওঠে-“আগুন জ্বলছে আমাদের পেটে।” নাট্যকার যুবকের জবানীতে এ কথা বলিয়ে নিয়ে নাট্যকাহিনির একটা বৃত্ত সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে লাইনের মধ্যে যখন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আগুন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল তখন সিভিক গার্ড ও দোকানদারের সুর নরম হয়। মানুষের একসাথে এমন প্রতিবাদের ভাষা থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছিল এমন প্রতিবাদ জঠরের আগুনকে নির্বাপিত করতেই।

সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে ‘আগুন’ এই ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণটি যথাযথ ও সার্থক হয়েছে। গণনাট্য আন্দোলনের মূল যে লক্ষ্য-বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে শোষণ, কালোবাজারি, জোতদার জমিদারদের অত্যাচারকে নিশ্চিহ্ন করা-তা এই নাটকের শেষে কিছুটা হলেও সার্থকতা লাভ করেছে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

2 thoughts on “আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top